খাদ্যের উপর আমাদের স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভর করে। খাদ্য বাছাই, খাদ্যের পরিমাণ ও অনুপাত, রান্নার পদ্ধতিসহ আরো অনেক বিষয় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এমন সচেতনতা খুব জরুরি।
এদিকে খিদের মুখে পেট ভরানোর সহজ সমাধান হোক কিংবা সময়সাপেক্ষ রান্নার ঝঞ্ঝাটে না গিয়ে কম সময়ে পেট ভরানোর কৌশল- ত্রাতা শুধুই ইনস্ট্যান্ট নুডলস। ছাত্রছাত্রী থেকে কর্মব্যস্ত মানুষ, ইনস্ট্যান্ট নুডলসের ভক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সব বয়সীদের মধ্যেই। অনেকে তো রান্না করার ঝক্কি এড়াতে দিনের পর দিন এই খাবারেই পেট ভরান।
কিন্তু জানেন কি, এই নুডল দিয়ে পেট ভরানোর অভ্যাস আপনার শরীরে কী কী ক্ষতি করছে? অজান্তেই সে সব বিপদ ডেকে আনছেন রোজ।
পুষ্টিবিদদের মতে, নেহাতই সেদ্ধ করে খেলেও এই খাবারে ক্ষতির পরিমাণ যে কোনো জাঙ্ক ফুডের চেয়েও বেশি!ভারতের কলকাতার পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংয়ের মতে, এই ধরনের খাবারে মূলত কোনো পুষ্টিগুণ নেই। বরং এর মধ্যে থাকা সিন্থেটিক কেমিক্যাল শরীরের মেদের আধিক্য বাড়ায়।
চিকিৎসকদের মতে, ইনস্ট্যান্ট নুডলসে থাকে সিন্থেটিক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট টিবিএইচকিউ। যা শরীরে ০.০২-০.০৩ শতাংশের বেশি পৌঁছলে বিপদ হতে পারে। প্রতি কেজিতে ৩০০ মিলিগ্রামের আশপাশে থাকাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু নুডলসে এর পরিমাণ এতই বেশি থাকে, যা ধীরে ধীরে লিভারের ক্রনিক অসুখ ডেকে আনে ও হজমপ্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে।
এবার জানা যাক ইনস্ট্যান্ট নুডলস কী কী ক্ষতি করছে:
হজম ক্ষমতা কমায়
ইন্সট্যান্ট নুডলস খাওয়ার পর স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন শাক-সবজি বা ফলমূল খেলেও প্রত্যাশিত লাভ হয় না। কারণ শাক-সবজি বা ফলের পুষ্টিকর উপাদানগুলোকে শরীর আর তখন গ্রহণ করতে পারে না। ইন্সট্যান্ট নুডলস খাওয়ার কারণেই এমন হয়। এই নুডলস খেলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত শরীরের হজম প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজই করে না।
ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে
ইন্সট্যান্ট নুডলসে এমন কিছু উপাদান থাকে, যেগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে নুডলস অনেকদিন ভালো রাখার জন্য যে ‘প্রিজারভেটিভ’ মেশানো হয়, সেগুলোর কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। কাপ-নুডলসের কাপ তৈরি করা হয় ‘পলিস্টাইরিন’ দিয়ে। সেই পলিস্টাইরিনেও থাকে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ানোর মতো উপাদান। কাপে গরম পানি ঢাললেই সেই উপাদানগুলো গলে নুডলসে মিশে যায়।
এছাড়া নুডলস যাতে শুকিয়ে শক্ত হয়ে না যায়, সেজন্য ‘প্রোপিলিন গ্লাইকল-’এর মতো ‘অ্যান্টিফ্রিজ’ উপাদানও মেশানো হয় ইন্সট্যান্ট নুডলসে। এ সব উপাদান অনেক ধরণের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ সবের কারণে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং কোনো এক সময় ক্যানসারও হতে পারে।
কিডনির সমস্যা
ইন্সট্যান্ট নুডলসে প্রচুর ‘সোডিয়াম’ থাকে। কমপক্ষে ৮০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে নুডলসের ছোট একটা প্যাকেটে। অথচ একটা মানুষ সারাদিনে মাত্র ২৪০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম নিতে পারে। ফলে প্রতিদিন একটা করে নুডলস খেলেও কিডনিতে অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অ্যালার্জি, মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা
প্রচুর এমএসজি, অর্থাৎ ‘মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট’-ও থাকে ইন্সট্যান্ট নুডলসে৷ এই এমএসজি, যা সাধারণভাবে ‘চাইনিজ লবণ’ বলে পরিচিত, অনেকের একদমই সহ্য হয় না। ফলে ইন্সট্যান্ট নুডলস খেলেই শুরু হয় মাথাব্যথা, বুক ব্যথাসহ নানা ধরণের সমস্যা।
গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর
গর্ভকালীন অবস্থায় অনেক নারী ইনস্ট্যান্ট নুডলস খেয়ে থাকেন। কিন্তু এই সময়ে দেহে প্রয়োজন ভিটামিন, ফাইবার, খনিজ পদার্থ জাতীয় খাদ্য এবং যেহেতু এটি একটি জাঙ্ক ফুড তাই এই খাবার না খাওয়াই উত্তম। এছাড়া অকাল গর্ভপাত অর্থাৎ মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ ইনস্ট্যান্ট নুডলসের কেমিক্যাল উপাদান ফেটুসের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা কমায়
যেসব বাচ্চারা ইন্সট্যান্ট নুডুলস খায়, তাদের শরীরে অন্য খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা থাকে না। এটি দেহে খাবারের পুষ্টি সঠিকভাবে শোষণে বাঁধা প্রদান করে। বিশেষ করে ৫ বছর বা তার কম শিশুদের জন্য অপুষ্টি জনিত নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ইনস্ট্যান্ট নুডলস।
দেহে রাসায়নিক পরিবর্তন
প্রতিদিন ইনস্ট্যান্ট নুডলস খেলে তা আমদের দেহে রাসায়নিক পরিবর্তন সঠিকভাবে হতে বাধা দেয়। কারণ ইনস্ট্যান্ট নুডলসে অবস্থিত অ্যাডিটিভস, রং ও প্রিজারভেটিভ থাকে তা দেহের রাসায়নিক বিক্রিয়াতে বাধা প্রদান করে। সূত্র: ডয়চে ভেলে ও আনন্দবাজার পত্রিকা
ইনস্ট্যান্ট নুডলসে কী কী ক্ষতি করছে শরীরের