সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করলে কয়েক মাস আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এতে করে মা ও শিশুর সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।

গর্ভধারন বা বাচ্চা নেওয়ার আগে যে সব প্রস্তুতির প্রয়োজন

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ধরে নিই বিবাহিত জীবন মানেই এক পর্যায়ে সন্তানের জন্ম দেয়া। কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে যেসব ঝামেলা হয় এবং সন্তান জন্ম হলেও সেসব জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে সেগুলোর আলোকে সন্তান নেয়ার আগে গর্ভধারণের প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিলে বাবা মা হওয়ার ব্যাপারটা তুলনামুলক কম কষ্টের এবং নিরাপদ হয়।

অধিকাংশ দম্পত্তি জানেন না যে, গর্ভধারনের পরেই কেবল নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও মায়ের যত্ন নিতে হয় তা নয়, গর্ভধারনের আগেও আছে নানা কাজ ও বিষয়। এগুলো গর্ভধারনের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন। এসব প্রস্তুতি এবং পরীক্ষা সন্তান নেয়ার কাজকে সহজ ও নিরাপদ করতে পারে।

কেউ না চাইলেও কোনো নিয়ম না মানলেও গর্ভধারণ করতে পারেন আবার অনেক দম্পতি সন্তান গ্রহণ করতে চান কিন্তু অজানা কারণে তা হয় না। কনডম ব্যবহার না করা বা পিল খাওয়া বন্ধ করে দিলেই একজন নারী প্রেগন্যান্ট হয়ে যাবেন তা কিন্তু নয়। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন, স্বাস্থ্যকর খাবার-দাবার ইত্যাদি বিষয় ঠিক রাখা খুব জরুরী মা হতে চাইলে।

প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সাধারণ ধারণাও থাকে না অনেকের। মায়ের স্বাস্থ্য, চাহিদা মাফিক পুষ্টি, মানসিক সুস্থতা, যথাযথ পরিবেশ-  মাতৃজঠরে বেড়ে ওঠা ভ্রণের বৃদ্ধি ও বিকাশের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ-সবল শিশুর জন্ম নিশ্চিত করতে হলে গর্ভধারিণীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা জরুরি। এজন্য চাই গর্ভধারণের প্রস্তুতি।

গর্ভধারণের আগে যা করতে হবে

  • উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডের মতো রোগ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে গর্ভপাত হতে পারে, গর্ভাবস্থায় শিশু মারা যেতে পারে, ওজন কম বা বেশি হতে পারে, শিশুর বুদ্ধি বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, জন্মের সময় ও পরবর্তীকালে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি মায়ের নিজেরও নানা জটিলতা হতে পারে। এসব ঝুঁকি শনাক্তের পর যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের পরই গর্ভধারণ করা।
  • রুবেলা ও হেপাটাইটিসের টিকা নেওয়া না থাকলে তা নিতে হবে।
  • গর্ভধারণের এক মাস আগে থেকে এবং গর্ভধারণের তিন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ৪ মিলিগ্রাম করে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে। এটি শিশুর জন্মগত ত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
  • মায়ের অতিরিক্ত ওজন, কম ওজন, রক্তশূন্যতা—এগুলো ঠিক করে এরপর গর্ভধারণ করা উচিত।
  • কেউ যদি আগে থেকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, খিঁচুনি, ঘুম বা মানসিক সমস্যা, থাইরয়েড ইত্যাদি রোগের ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাহলে তা অব্যাহত রাখবেন কি না, তা জেনে নিতে হবে।
  • গর্ভধারণের যে ভয় বা উৎকণ্ঠা থাকে, তা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে দূর করা।
  • পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা করা এবং ধূমপান বর্জন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা। জিনগত রোগের স্ক্রিনিং টেস্ট করা এবং এর ঝুঁকি নিয়ে অবহিত করা। প্রসবের সময়, প্রসবের পদ্ধতি, কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, সে বিষয়ে অবহিত করা। যাঁদের বারবার গর্ভপাত হয় বা খারাপ ইতিহাস আছে, তাঁদের সঠিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে কারণ খুঁজে না বের করে আবার গর্ভধারণ করা অনুচিত।

More Reading

Post navigation