গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অন্তত চারবার চেকআপ জরুরি। প্রথম ১৬ সপ্তাহে একবার, পরে ২৮ সপ্তাহে আরেকবার, তারপর ৩২ সপ্তাহে, এরপর একেবারে ডেলিভারির আগে একবার। অন্তত এই চারবার যদি একজন গর্ভবতী নারী চিকিৎসকের কাছে যান, তাহলে অনেকটাই শঙ্কামুক্ত থাকতে পারবেন। গর্ভকালীন তাঁর কোনো সমস্যা হলে সেগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে।
প্রথম চেকআপ
প্রথম চেকআপে তাঁকে জানানো হয়, কী খেতে হবে, কিভাবে চলতে হবে, কোনো ওষুধের দরকার আছে কি না। তাঁর গর্ভের সন্তানটি সুন্দরভাবে বড় হচ্ছে কি না। এসব চেকআপ করে বলে দেওয়া হয় এবং কিছু পরীক্ষা করতে হয়। প্রথমবার রক্তের হিমোগ্লোবিন, রক্তের গ্রুপ, আর এইচ ফ্যাক্টর, ইউরিন টেস্ট, হেপাটাইটিস বি-এর পরীক্ষা—এসব করিয়ে নিতে হয়।
তাই প্রথম চেকআপটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী নারী যখন চিকিৎসকের কাছে যান, তখন শুরুতেই তাঁর শারীরিক অবস্থা কেমন সেটি চিকিৎসক দেখে নেন। তিনি কী ফিট? তিনি কী ভালো থাকবেন এই দীর্ঘসময়টা? তারপর তাঁর ওজন, রক্ত, এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা আছে কি না এটা দেখে নিতে হয়। এ ছাড়া কোনো অসুখবিসুখ থাকলে জেনে তার প্রতিকারের ব্যবস্থাও করা হয়।
দ্বিতীয় চেকআপ
পরবর্তী সময় গর্ভবতী নারী যতবার চিকিৎসকের কাছে চেকআপের জন্য যাবেন ওজন নেওয়া, রক্তচাপ মাপা, হার্ট ও ফুসফুসের অবস্থা দেখা, রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা—এসব করাতে হবে। সঠিক রেকর্ড রেখে দেখতে হবে মা ঠিক আছেন কি না। এরপর পেটের সন্তান কেমন আছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করা। এরপর সামান্য কিছু পরীক্ষা করতে হয়। যেমন মায়ের রক্তের গ্রুপ কী, রক্তে শর্করা আছে কি না, রক্তশূন্যতা আছে কি না ইত্যাদি।
আর হেপাটাইটিস-বি রয়েছে কি না সেটাও দেখতে হয়।
তৃতীয় চেকআপ
চেকআপের সময় জরায়ুর অবস্থান ও উচ্চতা দেখতে হয়। এটি গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধির পরিমাপ নির্দেশ করে। এ ছাড়া ছয় মাসের পর থেকে গর্ভস্থ সন্তানের হার্টবিট শোনাটাও চেকআপের অংশ।
চতুর্থ চেকআপ
শেষ চেকআপের সময় পেলভিসের পরিমাপ নিতে হয়। পাশাপাশি আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয়। দেখে নিতে হয় শিশুটি কেমন রয়েছে। তার হার্টবিট ঠিক আছে কি না, তার গঠন-প্রকৃতি ঠিক কি না—এ দুটি হলো প্রধান পরীক্ষা। যখন এগুলো করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সব ঠিক আছে, তখন তাঁকে কিছু উপদেশ দেওয়া হয়।
জেনে রাখুন
♦ চেকআপের মাধ্যমেই নির্ণয় করা সম্ভব গর্ভবতীর কোনো জটিল সমস্যা রয়েছে কি না। সাত থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে জরায়ুর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ভ্রূণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিক আছে কি না জানা যায়। ৩২ থেকে ৩৩ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে গর্ভস্থ সন্তান সঠিক অবস্থানে আছে কি না তাও জানা যায়।
♦ একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে গর্ভবতী মায়েদের দ্বিগুণ খেতে হবে। অর্থাৎ বেশি বেশি খেতে হবে। আসলে তা নয়। দেখা গেছে প্রকৃতিগতভাবে একজন সুস্থ মা তাঁর বাচ্চার জন্য যথেষ্ট তৈরি থাকেন। তাই সাধারণত যতটুকু প্রয়োজন তিনি ততটুকু খাবেন। তার পাশাপাশি আমিষজাতীয় খাবার, যেমন : একটি ডিম, একটু মাংস, একটু মাছ, এক গ্লাস দুধ—এগুলো প্রতিদিন খেলেই তাঁর ক্যালরির চাহিদা পূরণ হবে।
♦ প্রথম তিন মাস, অনেকের বমিভাব দেখা দেয়। খাবারের রুচিও থাকে না। তরুণ মায়েদের এ সমস্যা বেশি হয় কিংবা অনেক দিন বিরতি নিয়ে সন্তান নিচ্ছেন, তাঁদের বেলায় এটা ঘটে। আসলে বমি বা একটু গা গুলানো—এগুলো খুবই স্বাভাবিক। স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলে ভয়ের কিছু নেই। তবে যেসব ক্ষেত্রে খুব বেশি বমি বা ১০-১৫ বার বমি হয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যদি গর্ভবতী মা পানিশূন্যতায় ভোগেন, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা স্যালাইন দেওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি বমি কমানোর ইনজেকশন এবং ট্যাবলেটও দেওয়া হয়। যাঁর বেলায় যেটি প্রযোজ্য, সেটি দিয়ে দেওয়া হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত বমি হয়, তখন আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখে নিতে হয় যে দুটি বাচ্চা বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বমির ভাবটা কিছুদিনের মধ্যেই কেটে যায়।
গর্ভাবস্থায় কি কি চেকআপ বা টেস্ট করতে হয়?