ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করে ১২ খাবার

ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করে ১২ খাবার

ফ্যাটি লিভার সংক্রান্ত রোগ দুইটি। একটি হলো- অ্যালকোহলের দ্বারা প্ররোচিত এবং আরেকটি নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। আমেরিকায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তদের বেশিরভাগই স্থূল এবং অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে অভ্যস্ত।

নাম থেকে বোঝা যায় ফ্যাটি লিভার রোগ মানে আপনার লিভারে খুব বেশি ফ্যাট রয়েছে। সুস্থ দেহে লিভার বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং পিত্ত থেকে হজম প্রোটিন উৎপন্ন করে। ফ্যাটি লিভার রোগের চিকিৎসার অন্যতম উপায় হলো নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলা।

সাধারণভাবে ফ্যাটি লিভার রোগ থেকে মুক্তি পেতে যেসব খাবার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তা হলো-

– প্রচুর ফল এবং সবজি।

– উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। যেমন- শাকসবজি এবং আস্ত শস্য।

– চিনি, লবণ, ট্রান্স ফ্যাট, পরিশোধিত শর্করা এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট অল্প পরিমাণে।

– অ্যালকোহল পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।

কম চর্বিযুক্ত, কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার ওজন কমাতে এবং ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদি আপনার ওজন বেশি হয় তাহলে শরীরের ওজনের কমপক্ষে দশ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নেয়া উচিত।

ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতে বা স্বাস্থ্যকর লিভার পেতে ১২টি আদর্শ খাবার ডায়েটে রাখতে পারেন। সেগুলো হলো-

১. কফি

গবেষণায় দেখা গেছে যে ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্তদের মধ্যে যারা কফি পান করেন তাদের লিভারের ক্ষতি কম হয়েছে। আর যারা কফি পান করেন না তাদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। কফিতে থাকে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন অস্বাভাবিক লিভার এনজাইমের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

২. সবুজ শাক-সবজি

ব্রোকলি লিভারে চর্বি জমতে বাধা দেয়। ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এমনটি প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও পালং শাকসহ সবুজ শাক-সবজি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কানাডিয়ান লিভার ফাউন্ডেশন স্বাদযুক্ত খাবারেই ক্যালোরি কমানোর রেসিপি দিয়েছে।

৩. চর্বি কমাতে টোফু

ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, টোফুর মতো খাবারে থাকা সয়া প্রোটিন লিভারে চর্বি জমা কমাতে পারে। টফুতে চর্বি কম এবং প্রোটিন বেশি থাকে। টোফু হলো এক ধরনের প্ল্যান্ট প্রোটিন। সয়া মিল্ক থেকে এটি তৈরি করা হয়।

৪. প্রদাহ কমায় ও চর্বির মাত্রা ঠিক রাখে মাছ

স্যামন, সার্ডিন, টুনা এবং ট্রাউটের মতো মাছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড বেশি থাকে। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড লিভারে ফ্যাটের মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমিয়ে আনে।

৫. শক্তির জন্য ওটমিল

ওটমিলের মতো আস্ত শস্যে থাকে কার্বোহাইড্রেট। এটি শরীরে শক্তি যোগায়। এই খাবারে থাকা ফাইবার শরীরকে পূর্ণ করে তোলে এবং ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৬. লিভার উন্নত করে আখরোট

আখরোটে প্রচুর পরিমাণে থাকে ওমেগা থ্রি। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত যারা আখরোট খেয়েছেন তাদের লিভার ফাংশনের আরও উন্নতি হয়েছে।

৭. লিভার রক্ষা করতে সাহায্য করে অ্যাভোকাডো

অ্যাভোকাডোতে স্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাভোকাডোতে থাকা রাসায়নিক লিভারের ক্ষয় ধীর করে দিতে পারে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

৮. দুধ এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার

দুধ থেকে তৈরি ছানা, মাঠা বা ঘোলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এটি লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। ২০১১ সালে ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন যুক্তির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।

৯. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জন্য সূর্যমুখী বীজ

সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই রয়েছে। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লিভারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।

১০. ওজন নিয়ন্ত্রণে অলিভ অয়েল

স্বাস্থ্যকর অলিভ ওয়েলে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, অলিভ অয়েল লিভারের এনজাইমের মাত্রা কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

১১. ওজন কমাতে সাহায্য করতে রসুন

খাবারের স্বাদ বাড়াতে খাবারে রসুন ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ভেষজটি ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত মানুষের শরীরের ওজন এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

১২. গ্রিন টি

গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদিও গবেষণার ফলাফল এখনো চূড়ান্ত নয়। গবেষকরা দেখেছেন যে, গ্রিন টি লিভারে চর্বি সঞ্চয় কমাতে পারে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। এছাড়াও গ্রিন টিতে আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।