লিভার আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অরগান। সেই সাথে এর সমস্যাও বড় বড়। এর থেকে মৃত্যুও হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের প্রতিরোধ ডাক্তারের হাতে না। নিজের হাতে। ফ্যাটি লিভার ডিজিসের চিকিৎসায় করণীয় বিষয়ে কথা বলেছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. রোকসানা বেগম।
ফ্যাটি লিভারের কারণ:
রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, বিভিন্ন মেডিসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত ওজন বা খুব দ্রুত ওজন কমানো, পেটে অতিরিক্ত মেদ, বেশি পরিমাণ রিফাইন্ড শর্করা গ্রহণ, মদ্যপান বা জেনেটিক্স কারণে একজন মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন।
মূলত, শর্করা এবং ফ্যাট বিপাক ক্রিয়ার নানা অসামঞ্জস্যতার ফলে এই রোগ হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা:
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে ওজন কমানো সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। যাদের ওজন বেশি, তারা যদি মাত্র ৭-১০% ওজন কমাতে পারেন তবে ফ্যাটি লিভার থেকে খুব দ্রুতই মুক্তি সম্ভব।
তবে মনে রাখবেন, না খেয়ে বা কোনো মেডিসিনের মাধ্যমে খুব দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না, এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।
আপনার ওজন যেমন ১ দিনে বা ৭ দিনে বাড়েনি তাই, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সময় দিতে হবে। সঠিক খাবার গ্রহণ সেই সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জনে সহায়তা করবে।
পানি:
যকৃত বা লিভার ভালো রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে পানি পান করা। লিভার ভালো রাখতে অবশ্যই সঠিক পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা আবশ্যক। সুতরাং, অস্বাস্থ্যকর পানীয় যেমন কার্বোনেটেড বেভারেজ বা রাস্তার মোড়ে থাকা শরবত পানের অভ্যাস থাকলে আজ থেকে বাদ দিন এবং বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং আপনার যকৃতকে ভালো রাখুন।
খাদ্যভাসে পরিবর্তন আনা এবং ডায়াবেটিস ও লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণে রাখা:
যেকোনো রোগ থেকে বাঁচার জন্য খাদ্যভাসে পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই। একজন মানুষের ওজন, উচ্চতা, পরিশ্রমের ধরন, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে নিয়মিত সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। বিভিন্ন রঙের শাকসবজি, ফল, লাল আটার রুটি বা লাল চালের ভাত এবং সঠিক পরিমাণে প্রোটিন, খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন রাখতে হবে। চিনি এবং চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণ বা লিপিড প্রোফাইল ঠিক রাখা কোনো কঠিন বিষয় নয়। আর এই কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে লিভার থেকে ফ্যাট খুব সহজে দূর হবে। মনে রাখবেন, লিভার ভালো রাখতে ফিট থাকার কোনো বিকল্প নেই।
আবারও বলছি, ফ্যাটি লিভারের প্রতিরোধ ডাক্তারের হাতে না। নিজের হাতে। যেটি সবচেয়ে প্রধান চিকিৎসা সেটি হলো জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন।
ফ্যাটি লিভার সহজে প্রতিরোধের উপায়