বেশি দিন বাঁচতে চাইলে এই পাঁচ খাবার থেকে দূরে থাকুন

বেশি দিন বাঁচতে চাইলে এই পাঁচ খাবার থেকে দূরে থাকুন

স্থূলতা সরাসরি মৃত্যুর জন্য দায়ী না হলেও নানা ধরনের শারীরিক জটিলতাকে এটি আমন্ত্রণ জানায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমান পৃথিবীতে পুষ্টির অভাবে যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে ঢের বেশি মারা যায় স্থূলতা থেকে শুরু হওয়া অসুখে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) নিশ্চিত করেছে যে স্থূলতা থেকে বিভিন্ন ধরনের হৃদ্‌রোগ হয়, আর হার্টের এসব অসুখ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এভাবে স্থূলতাজনিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে কী খাচ্ছি বা যা খাচ্ছি, তার ভেতরে আসলে কী কী পুষ্টি উপাদান আছে। নতুবা কোলেস্টেরল, হার্টের অসুখ আর ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আয়ু কমে আসবেই! মেডিকেল নিউজ অনুসারে জেনে নেওয়া যাক, কোন সেই সাত খাবার, যেগুলো স্থূলতা থেকে শুরু করে নানা প্রাণঘাতী শারীরিক জটিলতার জন্য দায়ী।

১. প্রক্রিয়াজাত মাংস


বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড) মাংসের মুখরোচক খাবার কিনতে পাওয়া যায়। হ্যাম, সসেজ, বেকন, ক্যানড বা স্মোকড মিট, চিকেন নাগেটস, চিকেন বল, চিকেন ললিপপ, চিকেন ফ্রাই, বিফ জার্কি প্রভৃতি খাবারের বিক্রি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছেই।


বায়োমেড সেন্টারের পর্যালোচনা বলছে, যাঁরা সপ্তাহে অন্তত তিন দিন প্রসেসড মাংস খান, তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় শতকরা ৪৪ শতাংশ বেশি!
এ ছাড়া সল্টিং, ডায়িং, স্মোকিংসহ নানা ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদানে এসব খাবার সংরক্ষণ করা হয়। এগুলো আবার ভাজা বা রান্নার পর পুষ্টিমান অন্তত অর্ধেক কমে যায়।


হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের ১ হাজার ৬০০ কেসস্টাডিতে দেখা যায়, যাঁরা নিয়মিত প্রসেসড মাংস খান, তাঁদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৯ শতাংশ বেশি।

যাঁরা নিয়মিত প্রসেসড মাংস খান, তাঁদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৯ শতাংশ বেশি

যাঁরা নিয়মিত প্রসেসড মাংস খান, তাঁদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৯ শতাংশ বেশিছবি: পেক্সেলস ডটকম

আরও পড়ুনঃ ঠান্ডা না গরম, কোন অবস্থায় দুধ খাওয়া ভালো?


২. সোডা, কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস


পানির পর বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ড্রিংকস নাকি সোডা। প্রতি গ্লাস সোডা, সফট ড্রিংকস আর এনার্জি ড্রিংকসে গড়ে ৪৪ গ্রাম চিনি থাকে। ফলে অল্প বয়সে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপে ভোগার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আমেরিকান সোসাইটি ফর ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের গবেষণা জানাচ্ছে, সোডা আর সফট ড্রিংকস খাওয়ায় অভ্যস্তদের হাড়ে মিনারেলের ঘনত্ব কমে যায়। ক্যালসিয়ামের শোষণে জটিলতা তৈরি হয়। ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। আর স্থূলতার প্রবণতা তো বাড়েই।

প্রতি গ্লাস সোডা, সফট ড্রিংকস আর এনার্জি ড্রিংকসে গড়ে ৪৪ গ্রাম চিনি থাকে

প্রতি গ্লাস সোডা, সফট ড্রিংকস আর এনার্জি ড্রিংকসে গড়ে ৪৪ গ্রাম চিনি থাকে ছবি: পেক্সেলস ডটকম

৩. ডিপ ফ্রায়েড ফুড


গত শতকে সারা বিশ্বের রান্নাঘরগুলোতেই কমবেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ভাজাপোড়া। বিভিন্ন ধরনের চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, অনিয়ন রিং, চিকেন ফ্রাই, ফিশ ফ্রাই থেকে শুরু করে যেকোনো কিছুই ভাজি করে একটা সুস্বাদু খাবার বানিয়ে খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। খাবার যতই ভাজি হয়, ততই তা হারাতে থাকে পুষ্টিমান, হয়ে ওঠে শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

গরম তেলে এসব উপাদান অ্যাক্রিলামাইডের সৃষ্টি করে, যেটার সঙ্গে ক্যানসারের গভীর, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। বেশি দিন সুস্থভাবে বাঁচতে চাইলে আপনার খাবারের তালিকা থেকে ডিপ ফ্রাই বিদায় করুন। অবশ্য মাসে এক দিন চলতেই পারে! শরীর সেটুকু মানিয়ে নেবে।

খাবার যতই ভাজি হয়, ততই তা হারাতে থাকে পুষ্টিমান, হয়ে ওঠে শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

খাবার যতই ভাজি হয়, ততই তা হারাতে থাকে পুষ্টিমান, হয়ে ওঠে শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছবি: পেক্সেলস ডটকম

আরও পড়ুনঃ যে ১০ কারণে কলা খাবেন প্রতিদিন

৪. মাইক্রোওয়েভড পপকর্ন

পপকর্ন স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। বিশেষ করে যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁরা দিব্যি পপকর্ন খেতে পারেন। তবে মাইক্রোওয়েভে পপকর্ন ভাজার জন্য পপকর্ন যে ব্যাগটিতে রাখা হয়, সমস্যা সেটিতে। মাইক্রোওয়েভেবল ব্যাগগুলো ‘খাদ্য নিরাপত্তাবিধি’র যে মাত্রা, এর অনেক নিচে অবস্থান করে। কেননা, এখানে আরএফওএ (RFOA) নামের মারাত্মক ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে। এটি গরমে প্যাকেটটাকে লিক হওয়া থেকে রক্ষা করে। এই উপাদান থাইরয়েড ডিজঅর্ডারের জন্য দায়ী। ২০১০ সালে এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেকটিভ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

পপকর্ন স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। বিশেষ করে যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁরা দিব্যি পপকর্ন খেতে পারেন

পপকর্ন স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। বিশেষ করে যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁরা দিব্যি পপকর্ন খেতে পারেন ছবি: পেক্সেলস ডটকম

৫ . পিৎজা


কথায় বলে, অনেক সমস্যার সমাধান দেয় একটা পিৎজা টেবিল। তবে সমস্যা হলো, পিৎজা নিজেই একটা সমস্যা! কেউ যদি আপনাকে বলেন, সবজি থাকে, চিজ থাকে, এগুলো তো ভালো। তাই পিৎজা ভালো। তাঁকে বিশ্বাস করবেন না। যে প্রসেসড মাংস, ফ্যাট আর তেল পিৎজায় থাকে, সেগুলো স্থূলতা, টাইপ–২ ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল আর হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।


সূত্র: মেডিকেল নিউজ

কথায় বলে, অনেক সমস্যার সমাধান দেয় একটা পিৎজা টেবিল। তবে সমস্যা হলো, পিৎজা নিজেই একটা সমস্যা!

কথায় বলে, অনেক সমস্যার সমাধান দেয় একটা পিৎজা টেবিল। তবে সমস্যা হলো, পিৎজা নিজেই একটা সমস্যা! ছবি: পেক্সেলস ডটকম

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *