শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়। এই উদ্ভিদ খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর, তেমনি তা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহারযোগ্য।

অ্যালোভেরা খেলে যে ৯টি উপকার পাবেন

শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়। এই উদ্ভিদ খাদ্য-পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর, তেমনি তা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহারযোগ্য। ঘৃতকুমারীর রস বা এর সালাদ খেয়ে এবং ত্বক ও চুলে ব্যবহার করে পেতে পারেন দারুণ উপকার। জেনে নিন ঘৃতকুমারীর ৯টি উপকারিতার কথা…

শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়
শরীরে নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে আর অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী অতুলনীয়

ভিটামিন ও খনিজ

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নানা ধরনের ভিটামিন ও খনিজের এক সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন-এ, সি, ই, ফলিক অ্যাসিড, বি-১, বি-২, বি-৩ (নিয়াসিন) ও ভিটামিন বি-৬–এর দারুণ উৎস। অল্প কিছু উদ্ভিদের মধ্যে ঘৃতকুমারী একটি, যাতে ভিটামিন বি-১২ আছে। প্রায় ২০ ধরনের খনিজ আছে এতে। আরও আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজ।

আরও পড়ুনঃ যে ১০ কারণে কলা খাবেন প্রতিদিন

চাপ ও রোগ প্রতিরোধ

ঘৃতকুমারী দারুণ অ্যাডাপ্টোজেন হিসেবে কাজ করে। শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে বাহ্যিক নানা চাপ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী উপাদানকে অ্যাডাপ্টোজেন বলা হয়। ঘৃতকুমারী দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করে তোলে এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। শারীরিক ও মানসিক চাপ মোকাবিলার পাশাপাশি পরিবেশগত দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও দেহকে সুরক্ষা দেয়।

হজমে সহায়ক

হজমের সমস্যা থেকেই শরীরে অনেক রোগ বাসা বাঁধে। তাই সুস্বাস্থ্যের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে খাবার-দাবার পরিপাক বা হজমের প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক রাখা। পরিপাক যন্ত্রকে পরিষ্কার করে হজম শক্তি বাড়াতে ঘৃতকুমারী অত্যন্ত কার্যকর। ঘৃতকুমারীর রস খাওয়ার দারুণ ব্যাপার হলো, এটা কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর। পরিপাক ও রেচন যন্ত্রকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখে বলে ঘৃতকুমারীর রস খেলে কৃমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, কিংবা কৃমি থাকলেও সেটা দূর হয়।

দূষণ মুক্তি

ঘৃতকুমারীর রস খুবই আঠালো। এমন উদ্ভিদের আঠালো রস খাওয়ার একটা দারুণ ব্যাপার হলো খাদ্যনালীর ভেতরে দিয়ে দেহের ভেতরে প্রবেশের সময় থেকেই পুরো পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করতে করতে যায়। এই রস দেহের অভ্যন্তরীণ নানা দূষিত উপাদান শুষে নিয়ে মলাশয় দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে দেহকে ভেতর থেকে দূষণমুক্ত করতে ঘৃতকুমারীর তুলনা নেই।

আরও পড়ুনঃ আমড়া ও কদবেল কেন খাবেন? জেনে নিন পুষ্টিবিদ থেকে

অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ

সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার-দাবারে অ্যালক্যালাইন ও অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ৮০/২০ বা ৮০ ভাগ অ্যালক্যালাইন সমৃদ্ধ খাবার ও ২০ ভাগ অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। ঘৃতকুমারী এমন খাবার, যা অ্যালক্যালাইন তৈরি করে। কিন্তু আজকাল নগরজীবনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে প্রায়ই অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগতে হয়। ফলে অতিরিক্ত অ্যাসিডের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে মাঝেমধ্যে ঘৃতকুমারী খেতে পারেন।

ত্বক ও চুলের মহৌষধ

আধুনিক প্রসাধনী সামগ্রীর অন্যতম কাঁচামাল এই অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। ত্বক ও চুলের জন্য এটা দারুণ উপকারী। এটা ত্বকের নানা ক্ষত সারিয়ে তুলতে কার্যকরী। রোদে পোড়া, ত্বকে ফুসকুড়ি পড়া ও পোকার কামড়ের মতো বাহ্যিক সমস্যাগুলো সারিয়ে তুলতে পারে সহায়ক। এমন বাহ্যিক ক্ষতে ঘৃতকুমারীর রস মাখলেও ব্যথার উপশম হবে, কেননা বেদনানাশক হিসেবেও এটা অতুলনীয়। চুল পরিষ্কার করতে, চুলে পুষ্টি জোগাতে এবং চুল ঝলমলে উজ্জ্বল রাখতে ঘৃতকুমারীর রস দারুণ।

অ্যামাইনো ও ফ্যাটি অ্যাসিড

মানবদেহের নানা প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড। এমন ২২টি অ্যামাইনো অ্যাসিডকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এর মধ্যে ৮টিকে অত্যাবশ্যক। ঘৃতকুমারীতে শরীরের জন্য অত্যাবশ্যক এই ৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিডই আছে। আর এতে মোট অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে ১৮ থেকে ২০ ধরনের। এ ছাড়া নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডেরও দারুণ উৎস।

আরও পড়ুনঃ ডিমের চেয়েও বেশি প্রোটিন মিলবে যে ৭ খাবারে

প্রদাহ ও ব্যথা কমায়

শরীরে নানা ধরনের প্রদাহ দূর করতে খুবই কার্যকর ঘৃতকুমারী। এতে বি-সিসটারোলসহ এমন ১২টি উপাদান আছে, যা প্রদাহ তৈরি হওয়া ঠেকায় এবং প্রদাহ হয়ে গেলে তা কমিয়ে আনে। ঘৃতকুমারীর এসব গুণ হাত-পায়ের সন্ধিস্থলের জড়তা দূর করে এবং গিঁটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

ওজন কমাতে সহায়ক

খাবার-দাবার হজমে সহায়তা এবং শরীরকে দূষণমুক্ত করার মধ্য দিয়ে ঘৃতকুমারী আপনার স্বাস্থ্যের যে প্রাথমিক উন্নতি ঘটায় তার অবধারিত ফল হলো ওজন ঠিকঠাক থাকা। এমনিতে ওজন কমানো নিয়ে অনেক সমস্যায় থাকলেও নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস খেলে আপনার বাড়তি ওজনের সমস্যা অনেক কমে আসবে। এ ছাড়া শরীর দূষণমুক্ত রাখতে পারার কারণে আপনার কর্মশক্তি বেড়ে যাবে, এ কারণেও আপনার ওজন কমবে।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট ও জি নিউজ

More Reading

Post navigation

Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *